Header Ads Widget

রাতের ফ্লাইটে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা, কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক মানের প্রস্তুতি!

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের অপার সৌন্দর্যে কক্সবাজার

রাতেও কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু, পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নতির আশা!

বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার, যা বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকতের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্রসৈকতটি সাগরের ঢেউয়ের সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ মিলনস্থল, যা বিশ্বের নানান প্রান্তের পর্যটকদের কাছে এ এক অনন্য আকর্ষণ। কক্সবাজারের বালুকাময় সৈকত, সবুজ বনভূমি, সাগরের নিরবচ্ছিন্ন বিশালতা ও পাহাড়-সংলগ্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য একে তুলনাহীন সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে।

হিমছড়ি ও ইনানী, প্রকৃতির অপূর্ব মিলনস্থল!

এই এলাকায় হিমছড়ি ও ইনানী সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের মন কাড়ে। হিমছড়ির পাহাড় বেয়ে নিচে নেমে আসা জলপ্রপাতের শীতল স্পর্শ এবং ইনানীর পাথুরে সৈকতের দৃশ্য কক্সবাজারের বৈচিত্র্যময় পরিবেশকে আরও উপভোগ্য করে তোলে। শহর থেকে কিছু দূরে অবস্থিত সোনাদিয়া দ্বীপের নির্জনতা ও সাফারি পার্কের মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা পর্যটকদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে চলে গেলে দেখা যায় কক্সবাজারের আরেকটি অনন্য সৌন্দর্য—পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে যাওয়া এই সড়ক পর্যটকদের মধ্যে ভিন্ন এক অনুভূতির সঞ্চার করে।

সোনাদিয়া দ্বীপ ও সাফারি পার্ক, কক্সবাজারের সীমানার বাইরে অন্যরকম অভিজ্ঞতা

কক্সবাজারের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য। সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের মুহূর্তটি অবলোকন করা যেন প্রকৃতির এক অভিজাত উপহার, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখে। এইসব সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় কক্সবাজার হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গীয় স্থান।

গতকাল রবিবার রাত থেকে কক্সবাজার-ঢাকা রুটে উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে, যা পর্যটন খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরে এই সুবিধা চালু হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সমুদ্রসৈকতের অপরূপ রাত্রিকালীন দৃশ্য উপভোগ করার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ফ্লাইট ওঠানামা শেষ হতো, কিন্তু এখন রাত ১০টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল করার অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এই সময়সীমা বাড়ানোর ফলে পর্যটকরা সকালবেলা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে সারাদিন সেখানে কাটিয়ে রাতে ঢাকায় ফিরে আসতে পারবেন, যা কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মেরিন ড্রাইভ সড়ক, পাহাড় আর সাগরের গাঁ ঘেঁষে পর্যটকদের স্বপ্নযাত্রা

বিমানবন্দরের উন্নয়ন এবং পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধির লক্ষ্য

গতকাল কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসাইন জানান, রাত ১০টা পর্যন্ত রানওয়ে উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে এবং এই সময়সীমায় বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেখানে উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা বিমানবন্দরের সুরক্ষা এবং পর্যটকদের সুবিধার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। বেবিচক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াচ আওয়ার বাড়ানো, উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন এবং পর্যটন অঞ্চলের উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাজ করছে তারা।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্যে মুগ্ধ কক্সবাজার

পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, এই সময়সীমা বাড়ানোর ফলে পর্যটক এবং ফ্লাইট সংখ্যা উভয়ই বাড়বে। বিদেশি পর্যটকদেরও কক্সবাজারে আগমন বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন খাত দেশের অর্থনীতির একটি বৃহৎ অংশ। ফলে রাতের ফ্লাইট চালুর এই পদক্ষেপ পর্যটনশিল্পে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।

দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ফুট থেকে ১০ হাজার ৭০০ ফুট পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এই সম্প্রসারণ কাজের ৮৫ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে, যা দেশের পর্যটনশিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসাইন জানিয়েছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বর্তমানে দিনে দুটি থেকে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস দিনে সাত থেকে আটটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এবং নভো এয়ারের চার থেকে পাঁচটি ফ্লাইট রয়েছে। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী এই ফ্লাইট সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

পর্যটকদের সুবিধার্থে উন্নত সেবার আশ্বাস

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুরুল কবির ভূঁইয়া সম্প্রতি কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিমানবন্দরের উন্নয়নের বিভিন্ন কাজ ঘুরে দেখেন এবং নতুন রানওয়ের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি জানান, ঝিনুক আকৃতির যে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে, ভবিষ্যতে এটি দেশের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া, দেশের প্রথম সমুদ্রবক্ষের ওপর নির্মিতব্য এই রানওয়ে নির্মাণে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, যা পুরোপুরি বেবিচকের অর্থায়নে হচ্ছে।

পর্যটন মৌসুমের সামনে রেখে রাত ১০টা পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচলের নতুন এই সুবিধা কক্সবাজারের পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments