নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে পদ্মা ব্যাংক বর্তমানে একটি মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্যাংকটি অনিয়ম ও দুর্নীতির জালে আটকা পড়ে। এবার ব্যাংকটির বিরুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গোপন করার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়ার পর দেখা গেছে, পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১৬০ শতাংশে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকাই খেলাপি ঋণ। অর্থাৎ, ব্যাংকটির মোট ঋণের ৮৬ শতাংশই খেলাপি। মাত্র ছয় মাস আগে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, যা এখন তিন হাজার কোটিরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যাংকটির সূত্রে জানা যায়, সাবেক নীতিনির্ধারকরা তথ্য গোপনের চেষ্টা করেছিলেন এবং পূর্ববর্তী গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় এই তথ্য গোপন রাখা হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই গোপন তথ্যগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. তালহা স্বীকার করেছেন যে, খেলাপি ঋণ বিষয়ে তারা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন এবং এখন খেলাপি ঋণের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৩ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯টি ব্যাংকের একটি ছিল পদ্মা ব্যাংক, যা আগে ফারমার্স ব্যাংক নামে পরিচিত ছিল। শুরু থেকেই ব্যাংকটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে এবং অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি সংকটে পড়ে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করা হয়। এরপর সরকারি চার ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ব্যাংকটিকে মূলধন সহায়তা দেয় এবং চৌধুরী নাফিজ সরাফাত নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের কারণে একাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন এবং ২০১৯ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক রাখা হয়। তবে নাম পরিবর্তনেও ব্যাংকটির দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৬ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ছিল প্রায় ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মন্তব্য করেছেন যে, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক কার্যত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং এসব ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া উচিত। পদ্মা ব্যাংক এখন এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে, তবে এই প্রক্রিয়া নতুন গভর্নরের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
কে,বি
0 Comments